ভালোবাসা ভালোবাসা করেই পৃথিবীটা মরছে। যাকে দেখো তারই প্রেম চাই। যেন প্রেম ছাড়া জীবন হয় না। এই কবিগুলোই মাথাটা খেয়েছে পাবলিকের। আমরা ভালোবাসতে শুরু করি কিসের ভিত্তিতে? মন? উঁহু। আচার আচরণ? হয়তো খানিকটা, তবে উপেক্ষণীয়। রূপ? আজ্ঞে হ্যাঁ! কিন্তু কজন স্বীকার করবে? যে জিনিসের শুরুই দ্বিচারিতার থেকে, তাকে এমন মহান করে দেখানো হয়েছে যে এখন তার সিংহাসন টলানোর উপায় নেই। আমার এইসব নাটকে বড়াবড়ের অনাগ্রহ। তখন সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ি, কলেজের অ্যানুয়াল ফাংশানে প্রতিবারের মতো প্রাইজ নেওয়ার পর অডিটোরিয়াম থেকে বেড়িয়ে আসছি, অমনি বাংলা অনার্সের একটি মেয়ের হঠাৎ উদয় হল। চোখমুখ দেখেই বুঝেছি এ মনে মনে রোগ বাধিয়ে বসেছে। ও কিছু বলার আগেই ওকে প্রাইজটা দেখিয়ে বলেছিলাম, 'দেখ তো। পরপর দুবার পেলাম। সারাবছর ভালো করে পড়াশুনো করি বলেই পাই। এখন যদি দ্যুম করে প্রেম করতে শুরু করি তাহলে সামনের বার এই প্রাইজটার কি হবে?'
বলতে লজ্জা নেই আমি এই পঁচিশ বছর বয়স পার করেছি কেবল উন্নতি, আরো আরো উন্নতি কিভাবে করব সেটা ভেবে। ফলও পেয়েছি। আজ আমি মাত্র পঁচিশেই মিশ্র স্টিল কোম্পানির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের চিফ হেড আর কোম্পানির একজন ডিরেক্টরও বটে। অফিস যেতে যেতেই এইসব সাতপাঁচ ভাবছি। দিনের মধ্যে এই গাড়িতে বসে থাকার সময়টা একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। এমনিতে হন্ডা সিটিতে বসে আরাম, তারউপর বাবুলাল ড্রাইভ করে খুব স্মুদ, একটু গা ছেড়েছ কি ঘুমিয়ে পড়বে!
অফিসে আমার চেম্বার থার্ড ফ্লোরে, কোম্পানির বর্তমান মালকিন শ্রীমতি দেবযানী মিশ্রের চেম্বারের ঠিক উল্টোদিকে। ওঁনার স্বামী অজয়বাবু গতমাসে হঠাতই এক ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে গত হয়েছেন; ফলস্বরূপ দেবযানীদেবী এখন এই তাবড় কোম্পানির স্থাবর, অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির অধিকারীনি। বেশী বয়স হয়নি অজয়বাবুর। মাত্র একচল্লিশেই চলে গেলেন। সাথে সাথেই কয়েক শ'কোটি ডলার বেড়ে গেল তাঁর সাইত্রিশ বছর বয়সী অর্ধাঙ্গিনীর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সে। তবে খুব বেশীদিন এত সুখ দেবযানীদেবীর কপালে জুটবে বলে মনে হয়না। অজয়বাবুর এক দুঃসম্পর্কের কাকা অরুন মিশ্র খুব শিগগির সম্পত্তির অর্ধাংশ দাবী করবেন বলে একটা গুজব ছড়িয়েছে অফিসে। আমি জানি গুজবটার কিয়দাংশ সঠিক। অর্ধাংশ নয়, অরুনবাবু পুরো কোম্পানিটাই দাবী করবেন, সামনের বোর্ড মিটিঙে। দেবযানীর মনে হয় এইসব লাভক্ষতির হিসেবে বিশেষ কিছু যায় আসে না। মালিকানা পাওয়ার পরে গত দুমাসে একবারও অফিসে আসেননি। কোম্পানির সিইও কর্ণ থাপাড় মিশ্র প্যালেসে গিয়ে গিয়ে দরকারী সই সাবুদ নিয়ে আসেন। বাহাত্তর বছর বয়স হল মিঃ থাপাড়ের, এখনও এতটাই কর্মঠ যে না দেখলে বিশ্বাস হয়না। সকালে ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশন দেখছেন, তো দূপুরে বিদেশী ক্লায়েন্টদের সাথে ডিল ফাইনাল করা, সন্ধ্যায় ফ্লাইটে দিল্লী, বম্বের ব্রাঞ্চে ঘুরে পরদিন সকালে আবার কলকাতার অফিসে জয়েন করা- এসব ওঁর পক্ষেই সম্ভব।
আমি চেম্বারে ঢুকতে গিয়ে একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল। দেবযানীদেবীর চেম্বারের গায়ে 'ইন' লেখা। যাব্বাবা! টনক নড়েছে তবে!
চেম্বারে ঢুকতেই ল্যান্ডলাইনটা বেজে উঠলো।
-হ্যালো স্যর, গুডমর্নিং।
-গুডমর্নিং।
-মিসেস মিশ্র উড লাইক টু সি ইউ নাও; উড ইউ প্লিজ কাম ওভার?
-ইয়াহ্* সিওর।
আমি টাইটা ঠিক করলাম। হাত দিয়ে চুলটা একটু হালকা করে আঁচড়ে নিলাম। গটগট করে গিয়ে ওঁনার চেম্বারে নক করলাম।
-'ইয়েস, কাম ইন।' গলাটা বেশ মিষ্টি তো!
দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। অজয়বাবু যেভাবে ছেড়েছেন অফিসটা, তেমনই আছে। দেওয়াল জুড়ে বড় কাচের জানলা, তার সামনে সোফা সেট; ওভাল শেপের টেবিল, তার পেছনে অজয়বাবুর বড় রিভলবিং চেয়ার। চেয়ারে এখন বসে আছেন যিনি তাঁর বয়স যে সাইত্রিশ সেটা বলে না দিলে বোঝা দুষ্কর। কমলা পাড় দেওয়া সাদা শাড়িতে ভরা ফর্সা শরীরটায় যৌবন যেন উপচে পড়ছে। ওই টানা টানা চোখ দুটো যেন আমার সব রহস্য জেনে গেছে, ওই হাসি যেন আমার নিজেকে লুকিয়ে রাখার ব্যর্থ প্রয়াসের প্রতি বিদ্রুপ! লজ্জা লাগে আমার। চোখ সরিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাই। এরকমটা তো আগে হয়নি।
-প্লিজ, হ্যাভ আ সিট।
আমি হেসে বসলাম।
-গুডমর্নিং ম্যাম।
-মর্নিং। মিঃ রায়, লেট্*স কাম টু দ্য পয়েন্ট। আমাদের কোম্পানি খুব তাড়াতাড়ি একটা বড় ঝড়ের মধ্যে পড়তে চলেছে। আমার এক দূঃসম্পর্কের কাকাশ্বশুর আমাদের কোম্পানির মালিকানা দাবী করবেন আগামী বোর্ড মিটিঙে। আমার স্বামী আপনার কর্মক্ষমতা আর বিচক্ষণতা সম্বন্ধে আমায় বলেগেছেন। আমি আপনার সাহায্যপ্রার্থী।
আমার চোখ কথা শুনছে না। বারবার ওঁর চোখ থেকে ঠোঁট বেয়ে চলে যাচ্ছে আঁচলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর ভাবে ফুলে থাকা আগ্নেয়গিরিতে, সেখান থেকে ছুঁয়ে যাচ্ছে অনাবৃত মসৃণ পেট, নাভী। আমি মনে মনে খানকতক গালাগাল দিলাম নিজেকে। জিজ্ঞেস করলাম, 'আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি ম্যাম?'
-বলছি। আগে বলুন আপনি মিঃ থাপাড়কে কতদিন চেনেন?
-যবে থেকে এখানে চাকরী করছি। ডিরেক্টর হবার পর যোগাযোগ বেড়েছে। তবে পার্সোনাল লাইফ নিয়ে বিশেষ কিছু জানি না।
-বেশ। আমার মনে হয় উনি আমাদের ঠকিয়েছেন। অজয় চলে যাবার পর আমি খুব ভেঙ্গে পড়ি। ওই সময় আর কোম্পানির লাভ লোকসানে নিজেকে জড়াতে ভালো লাগেনি। তাই মিঃ থাপাড়ের কথাই বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে গিয়েছি। গতকাল সকালে উনি আমাকে বলেন অরুণ মিশ্র আমাদের কোম্পানির মালিকানা দাবী করবেন। ওঁর অনেক টাকা, ইউরোপ আর অ্যাফ্রিকার মন্ত্রীমহলে ওঠাবসা, উনি কোম্পানিতে আরোও ইনভেস্ট আনতে পারবেন, আমিও ক্ষতিপূরণবাবদ মোটা টাকা পাবো- ইত্যাদি ইত্যাদি বলে আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করছিলেন। অজয়ের ধ্যান জ্ঞান সব ছিল এই কোম্পানি। একে তো আমি এতো সহজে ছাড়তে পারি না। তাই রাজী হইনি। এবার বলুন আমার কি করা উচিত? এভাবে বিভীষণকে দিয়ে কোম্পানি চালাই কিভাবে বলুন?
একটানা অনেকক্ষণ কথা বলে থামলেন দেবযানীদেবী। হাঁপিয়ে গেছেন। চোখের কোনায় কিছু চিকচিক করছে কি? আঘাত তো আমারও কম লাগেনি। থাপাড় স্যরকে যত দেখেছি তত অনুপ্রাণিত হয়েছি। সেই থাপাড় স্যর এটা করলেন! হঠাৎ মনে হল এই অসহায় মহিলার পাশে আমাকে দাঁড়াতেই হবে। পরক্ষণেই সাবধান করলাম নিজেকে। এতো বড় কোম্পানির ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে, ছেলেখেলা নয়।
-কিছু তো বলুন, মিঃ রায়।
চমক ভাঙ্গল আমার।
-দেখুন ম্যাম, এই মুহুর্তে সব থেকে যেটা জরুরি সেটা হল লিগ্যাল অ্যাডভাইস নেওয়া। আমি যতদূর জানি আমাদের কোম্পানি মুখার্জী সলিসিটরসের ক্লায়েন্ট। কিন্তু আপনার পক্ষে ওঁদের সাথে যোগাযোগ করাটা ঠিক হবে না। কারণ মুখার্জীদের সাথে থাপাড় স্যরের খুব ক্লোজ রিলেশন।
দেবযানী চিন্তিত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। এদিকে আমার বুকটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে ওই গভীর দৃষ্টির সামনে।
-আমার এক বন্ধু আছে হাইকোর্টে। ওঁর বাবা ব্যারিস্টার। আপনি চাইলে আমি যোগাযোগ করতে পারি। ব্যাপারটা গোপন থাকবে।
-আপনার কাছে ওনার নাম্বার আছে?
-আছে, ম্যাম।
-বেশ। তবে আপনি এখনই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন। আজকে দূপুরে। সব ফিক্সড করে একবার আমায় রিং করবেন।
-একটা কথা ছিল ম্যাম।
-ইয়েস?
-আমি যদি আপনাকে আপনার সেক্রেটারির থ্রুতে ফোন করি তাহলে থাপাড় স্যরের কাছে খবর গেলেও যেতে পারে। তাই যদি আপনার পার্সনাল নাম্বারটা-
-বুঝেছি। কিন্তু দুটো শর্ত আছে।
-শর্ত?
-এক, ওই স্কাউন্ড্রেলটাকে আমার সামনে স্যর বলবেন না। আর দুই, আমাকে আমার সামনে ম্যাম বলবেন না।
-তাহলে কি বলব?
-থাপাড়কে যা খুশী বলবেন। আমাকে দেবযানী ডাকবেন।
আমার পেটের ভেতর একসঙ্গে কয়েক কোটি খরগোশ ঢুকে পড়েছে। তারা একসাথে লাফাচ্ছে, ঝাফাচ্ছে! আর আমার চোখ ঢুকে পড়তে চাইছে ওই কমলা শাড়ীর ফাঁক দিয়ে, ওই নরম পেটের ভাঁজ হয়ে, দুরূহ সব গিরীখাত পেরিয়ে ওই আগ্নেয়গিরির চূড়ায়, যেখানে গরম লাভার মধ্যে মিশে গেছে মিষ্টি মধু। এই অনুভূতি তো সুবিধের না। এটা নিছক রসালো মাগি দেখে গরম খেয়ে যাওয়া না, এর সাথে কোথায় যেন বুকের একটা যোগ আছে। খরগোশ গুলো যতবার দৌড়চ্ছে, ততবার বুকে একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। পর্নস্টারদের ন্যাংটো ছবি দেখলে তো এমন হয়না। আমি আর ভাবি না। এবার উঠতে হবে।
-বেশ, তাই হবে।
-হুম। আমার নাম্বারটা নোট করুন।
আমার চেম্বারে ঢুকে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলাম একটা। নাঃ হাতের কাজগুলো সেরে ফেলা যাক। আমি অভিরূপের নাম্বারটা ডায়াল করলাম।
-বোকাচোদা তোর এতো ঘ্যাম কিসের রে? ফাইভ স্টার ছাড়া মাল খাস না নাকি? আমার জন্মদিনে আসলি না কেন?
এতো ফোন ধরেই খিস্তি শুরু করল!
-ভাই বিশাল চাপে আছি রে এইকদিন। তোকে সরি বলব বলেই ফোন করলাম।
-তোকে আমি চিনি না শুয়োর? নিশ্চয়ই রেপ টেপ করেছিস। বলে ফেল।
-আরে না না। কোম্পানির ব্যাপার।
-তোরা তো মুখার্জীর বউ।
-ধুর শালা। এটা অন্য কেস। কনফিডেনশিয়াল। দেখা হলে বলছি। কাকুর সাথে আজকে দুপুরের দিকে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফিক্সড কর।
-আচ্ছা আচ্ছা। তিনটে নাগাদ চলে আয়।
ফোনটা রেখে দেবযানীকে ফোন করিঃ
-বলুন।
-অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছি। দুপুর তিনটেয়।
-বেশ। আপনি দেড়টা নাগাদ আফ্রায় আমার সাথে মিট করুন; লাঞ্চটা একসাথে করা যাবে।
কিছু বলার আগেই লাইন কেটে দিল। প্রথম দিনের আলাপেই মালকিনের সাথে লাঞ্চ! মন্দ কী!
তবে এইভাবে জড়িয়ে পড়াটাও কি ঠিক হচ্ছে? দেবযানী টিকে থাকলে চিন্তা নেই; কিন্তু অরুনবাবু গদি দখল করলে? তখন তো আমাকে শত্রুপক্ষ হিসেবে প্রথমেই বলি চড়াবে। চড়ালেই বা; আইআইএম কলকাতার টপার আমি। চাকরী আমাকে খুঁজতে হবে না। এখনও দিনে তিনটে চারটে করে অফার পাই ইমেলে। নিজেকে নিজেই সান্তনা দিচ্ছি!
'টিং টিং'। হোয়াটস্যাপে মেসেজ ঢুকল। নামটা দেখেই আবার পেটের ভিতর খরগোশগুলো জেগে উঠল!
-'চুপ করে পার্কিং এ চলে আসুন। আমি ওয়েট করছি।'
এ আবার কেমন টাইপের কথা? এসব তো পানু বইতে থাকে। অন্ধকার পার্কিং লটে গাড়ীর ভেতর নায়ক নায়িকাকে দুঘণ্টা, তিন ঘণ্টা ধরে চুদেই যাচ্ছে, অথচ মাল পড়ছে না! মনকে সংযত করি আমি। ইন্টারনেটে আজেবাজে গল্প পড়াটা কমাতে হবে।
ল্যাপটপটা স্লিপ মোডে ফেলে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে লক করি। তারপর আস্তে করে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসি। রিসেপশনের জায়গাটায় এইসময়টা একটু ভিড় থাকে, ক্লায়েন্ট মিটিঙের জন্য। আমি পাশ কাটিয়ে টুক করে লিফটে উঠে পড়লাম। যাক, অর্ধেক কাজ শেষ, বাকি অর্ধ সেতুর ওপারে!
বলতে লজ্জা নেই আমি এই পঁচিশ বছর বয়স পার করেছি কেবল উন্নতি, আরো আরো উন্নতি কিভাবে করব সেটা ভেবে। ফলও পেয়েছি। আজ আমি মাত্র পঁচিশেই মিশ্র স্টিল কোম্পানির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের চিফ হেড আর কোম্পানির একজন ডিরেক্টরও বটে। অফিস যেতে যেতেই এইসব সাতপাঁচ ভাবছি। দিনের মধ্যে এই গাড়িতে বসে থাকার সময়টা একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। এমনিতে হন্ডা সিটিতে বসে আরাম, তারউপর বাবুলাল ড্রাইভ করে খুব স্মুদ, একটু গা ছেড়েছ কি ঘুমিয়ে পড়বে!
অফিসে আমার চেম্বার থার্ড ফ্লোরে, কোম্পানির বর্তমান মালকিন শ্রীমতি দেবযানী মিশ্রের চেম্বারের ঠিক উল্টোদিকে। ওঁনার স্বামী অজয়বাবু গতমাসে হঠাতই এক ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে গত হয়েছেন; ফলস্বরূপ দেবযানীদেবী এখন এই তাবড় কোম্পানির স্থাবর, অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির অধিকারীনি। বেশী বয়স হয়নি অজয়বাবুর। মাত্র একচল্লিশেই চলে গেলেন। সাথে সাথেই কয়েক শ'কোটি ডলার বেড়ে গেল তাঁর সাইত্রিশ বছর বয়সী অর্ধাঙ্গিনীর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সে। তবে খুব বেশীদিন এত সুখ দেবযানীদেবীর কপালে জুটবে বলে মনে হয়না। অজয়বাবুর এক দুঃসম্পর্কের কাকা অরুন মিশ্র খুব শিগগির সম্পত্তির অর্ধাংশ দাবী করবেন বলে একটা গুজব ছড়িয়েছে অফিসে। আমি জানি গুজবটার কিয়দাংশ সঠিক। অর্ধাংশ নয়, অরুনবাবু পুরো কোম্পানিটাই দাবী করবেন, সামনের বোর্ড মিটিঙে। দেবযানীর মনে হয় এইসব লাভক্ষতির হিসেবে বিশেষ কিছু যায় আসে না। মালিকানা পাওয়ার পরে গত দুমাসে একবারও অফিসে আসেননি। কোম্পানির সিইও কর্ণ থাপাড় মিশ্র প্যালেসে গিয়ে গিয়ে দরকারী সই সাবুদ নিয়ে আসেন। বাহাত্তর বছর বয়স হল মিঃ থাপাড়ের, এখনও এতটাই কর্মঠ যে না দেখলে বিশ্বাস হয়না। সকালে ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশন দেখছেন, তো দূপুরে বিদেশী ক্লায়েন্টদের সাথে ডিল ফাইনাল করা, সন্ধ্যায় ফ্লাইটে দিল্লী, বম্বের ব্রাঞ্চে ঘুরে পরদিন সকালে আবার কলকাতার অফিসে জয়েন করা- এসব ওঁর পক্ষেই সম্ভব।
আমি চেম্বারে ঢুকতে গিয়ে একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল। দেবযানীদেবীর চেম্বারের গায়ে 'ইন' লেখা। যাব্বাবা! টনক নড়েছে তবে!
চেম্বারে ঢুকতেই ল্যান্ডলাইনটা বেজে উঠলো।
-হ্যালো স্যর, গুডমর্নিং।
-গুডমর্নিং।
-মিসেস মিশ্র উড লাইক টু সি ইউ নাও; উড ইউ প্লিজ কাম ওভার?
-ইয়াহ্* সিওর।
আমি টাইটা ঠিক করলাম। হাত দিয়ে চুলটা একটু হালকা করে আঁচড়ে নিলাম। গটগট করে গিয়ে ওঁনার চেম্বারে নক করলাম।
-'ইয়েস, কাম ইন।' গলাটা বেশ মিষ্টি তো!
দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। অজয়বাবু যেভাবে ছেড়েছেন অফিসটা, তেমনই আছে। দেওয়াল জুড়ে বড় কাচের জানলা, তার সামনে সোফা সেট; ওভাল শেপের টেবিল, তার পেছনে অজয়বাবুর বড় রিভলবিং চেয়ার। চেয়ারে এখন বসে আছেন যিনি তাঁর বয়স যে সাইত্রিশ সেটা বলে না দিলে বোঝা দুষ্কর। কমলা পাড় দেওয়া সাদা শাড়িতে ভরা ফর্সা শরীরটায় যৌবন যেন উপচে পড়ছে। ওই টানা টানা চোখ দুটো যেন আমার সব রহস্য জেনে গেছে, ওই হাসি যেন আমার নিজেকে লুকিয়ে রাখার ব্যর্থ প্রয়াসের প্রতি বিদ্রুপ! লজ্জা লাগে আমার। চোখ সরিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাই। এরকমটা তো আগে হয়নি।
-প্লিজ, হ্যাভ আ সিট।
আমি হেসে বসলাম।
-গুডমর্নিং ম্যাম।
-মর্নিং। মিঃ রায়, লেট্*স কাম টু দ্য পয়েন্ট। আমাদের কোম্পানি খুব তাড়াতাড়ি একটা বড় ঝড়ের মধ্যে পড়তে চলেছে। আমার এক দূঃসম্পর্কের কাকাশ্বশুর আমাদের কোম্পানির মালিকানা দাবী করবেন আগামী বোর্ড মিটিঙে। আমার স্বামী আপনার কর্মক্ষমতা আর বিচক্ষণতা সম্বন্ধে আমায় বলেগেছেন। আমি আপনার সাহায্যপ্রার্থী।
আমার চোখ কথা শুনছে না। বারবার ওঁর চোখ থেকে ঠোঁট বেয়ে চলে যাচ্ছে আঁচলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর ভাবে ফুলে থাকা আগ্নেয়গিরিতে, সেখান থেকে ছুঁয়ে যাচ্ছে অনাবৃত মসৃণ পেট, নাভী। আমি মনে মনে খানকতক গালাগাল দিলাম নিজেকে। জিজ্ঞেস করলাম, 'আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি ম্যাম?'
-বলছি। আগে বলুন আপনি মিঃ থাপাড়কে কতদিন চেনেন?
-যবে থেকে এখানে চাকরী করছি। ডিরেক্টর হবার পর যোগাযোগ বেড়েছে। তবে পার্সোনাল লাইফ নিয়ে বিশেষ কিছু জানি না।
-বেশ। আমার মনে হয় উনি আমাদের ঠকিয়েছেন। অজয় চলে যাবার পর আমি খুব ভেঙ্গে পড়ি। ওই সময় আর কোম্পানির লাভ লোকসানে নিজেকে জড়াতে ভালো লাগেনি। তাই মিঃ থাপাড়ের কথাই বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে গিয়েছি। গতকাল সকালে উনি আমাকে বলেন অরুণ মিশ্র আমাদের কোম্পানির মালিকানা দাবী করবেন। ওঁর অনেক টাকা, ইউরোপ আর অ্যাফ্রিকার মন্ত্রীমহলে ওঠাবসা, উনি কোম্পানিতে আরোও ইনভেস্ট আনতে পারবেন, আমিও ক্ষতিপূরণবাবদ মোটা টাকা পাবো- ইত্যাদি ইত্যাদি বলে আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করছিলেন। অজয়ের ধ্যান জ্ঞান সব ছিল এই কোম্পানি। একে তো আমি এতো সহজে ছাড়তে পারি না। তাই রাজী হইনি। এবার বলুন আমার কি করা উচিত? এভাবে বিভীষণকে দিয়ে কোম্পানি চালাই কিভাবে বলুন?
একটানা অনেকক্ষণ কথা বলে থামলেন দেবযানীদেবী। হাঁপিয়ে গেছেন। চোখের কোনায় কিছু চিকচিক করছে কি? আঘাত তো আমারও কম লাগেনি। থাপাড় স্যরকে যত দেখেছি তত অনুপ্রাণিত হয়েছি। সেই থাপাড় স্যর এটা করলেন! হঠাৎ মনে হল এই অসহায় মহিলার পাশে আমাকে দাঁড়াতেই হবে। পরক্ষণেই সাবধান করলাম নিজেকে। এতো বড় কোম্পানির ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে, ছেলেখেলা নয়।
-কিছু তো বলুন, মিঃ রায়।
চমক ভাঙ্গল আমার।
-দেখুন ম্যাম, এই মুহুর্তে সব থেকে যেটা জরুরি সেটা হল লিগ্যাল অ্যাডভাইস নেওয়া। আমি যতদূর জানি আমাদের কোম্পানি মুখার্জী সলিসিটরসের ক্লায়েন্ট। কিন্তু আপনার পক্ষে ওঁদের সাথে যোগাযোগ করাটা ঠিক হবে না। কারণ মুখার্জীদের সাথে থাপাড় স্যরের খুব ক্লোজ রিলেশন।
দেবযানী চিন্তিত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। এদিকে আমার বুকটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে ওই গভীর দৃষ্টির সামনে।
-আমার এক বন্ধু আছে হাইকোর্টে। ওঁর বাবা ব্যারিস্টার। আপনি চাইলে আমি যোগাযোগ করতে পারি। ব্যাপারটা গোপন থাকবে।
-আপনার কাছে ওনার নাম্বার আছে?
-আছে, ম্যাম।
-বেশ। তবে আপনি এখনই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন। আজকে দূপুরে। সব ফিক্সড করে একবার আমায় রিং করবেন।
-একটা কথা ছিল ম্যাম।
-ইয়েস?
-আমি যদি আপনাকে আপনার সেক্রেটারির থ্রুতে ফোন করি তাহলে থাপাড় স্যরের কাছে খবর গেলেও যেতে পারে। তাই যদি আপনার পার্সনাল নাম্বারটা-
-বুঝেছি। কিন্তু দুটো শর্ত আছে।
-শর্ত?
-এক, ওই স্কাউন্ড্রেলটাকে আমার সামনে স্যর বলবেন না। আর দুই, আমাকে আমার সামনে ম্যাম বলবেন না।
-তাহলে কি বলব?
-থাপাড়কে যা খুশী বলবেন। আমাকে দেবযানী ডাকবেন।
আমার পেটের ভেতর একসঙ্গে কয়েক কোটি খরগোশ ঢুকে পড়েছে। তারা একসাথে লাফাচ্ছে, ঝাফাচ্ছে! আর আমার চোখ ঢুকে পড়তে চাইছে ওই কমলা শাড়ীর ফাঁক দিয়ে, ওই নরম পেটের ভাঁজ হয়ে, দুরূহ সব গিরীখাত পেরিয়ে ওই আগ্নেয়গিরির চূড়ায়, যেখানে গরম লাভার মধ্যে মিশে গেছে মিষ্টি মধু। এই অনুভূতি তো সুবিধের না। এটা নিছক রসালো মাগি দেখে গরম খেয়ে যাওয়া না, এর সাথে কোথায় যেন বুকের একটা যোগ আছে। খরগোশ গুলো যতবার দৌড়চ্ছে, ততবার বুকে একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। পর্নস্টারদের ন্যাংটো ছবি দেখলে তো এমন হয়না। আমি আর ভাবি না। এবার উঠতে হবে।
-বেশ, তাই হবে।
-হুম। আমার নাম্বারটা নোট করুন।
আমার চেম্বারে ঢুকে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলাম একটা। নাঃ হাতের কাজগুলো সেরে ফেলা যাক। আমি অভিরূপের নাম্বারটা ডায়াল করলাম।
-বোকাচোদা তোর এতো ঘ্যাম কিসের রে? ফাইভ স্টার ছাড়া মাল খাস না নাকি? আমার জন্মদিনে আসলি না কেন?
এতো ফোন ধরেই খিস্তি শুরু করল!
-ভাই বিশাল চাপে আছি রে এইকদিন। তোকে সরি বলব বলেই ফোন করলাম।
-তোকে আমি চিনি না শুয়োর? নিশ্চয়ই রেপ টেপ করেছিস। বলে ফেল।
-আরে না না। কোম্পানির ব্যাপার।
-তোরা তো মুখার্জীর বউ।
-ধুর শালা। এটা অন্য কেস। কনফিডেনশিয়াল। দেখা হলে বলছি। কাকুর সাথে আজকে দুপুরের দিকে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফিক্সড কর।
-আচ্ছা আচ্ছা। তিনটে নাগাদ চলে আয়।
ফোনটা রেখে দেবযানীকে ফোন করিঃ
-বলুন।
-অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছি। দুপুর তিনটেয়।
-বেশ। আপনি দেড়টা নাগাদ আফ্রায় আমার সাথে মিট করুন; লাঞ্চটা একসাথে করা যাবে।
কিছু বলার আগেই লাইন কেটে দিল। প্রথম দিনের আলাপেই মালকিনের সাথে লাঞ্চ! মন্দ কী!
তবে এইভাবে জড়িয়ে পড়াটাও কি ঠিক হচ্ছে? দেবযানী টিকে থাকলে চিন্তা নেই; কিন্তু অরুনবাবু গদি দখল করলে? তখন তো আমাকে শত্রুপক্ষ হিসেবে প্রথমেই বলি চড়াবে। চড়ালেই বা; আইআইএম কলকাতার টপার আমি। চাকরী আমাকে খুঁজতে হবে না। এখনও দিনে তিনটে চারটে করে অফার পাই ইমেলে। নিজেকে নিজেই সান্তনা দিচ্ছি!
'টিং টিং'। হোয়াটস্যাপে মেসেজ ঢুকল। নামটা দেখেই আবার পেটের ভিতর খরগোশগুলো জেগে উঠল!
-'চুপ করে পার্কিং এ চলে আসুন। আমি ওয়েট করছি।'
এ আবার কেমন টাইপের কথা? এসব তো পানু বইতে থাকে। অন্ধকার পার্কিং লটে গাড়ীর ভেতর নায়ক নায়িকাকে দুঘণ্টা, তিন ঘণ্টা ধরে চুদেই যাচ্ছে, অথচ মাল পড়ছে না! মনকে সংযত করি আমি। ইন্টারনেটে আজেবাজে গল্প পড়াটা কমাতে হবে।
ল্যাপটপটা স্লিপ মোডে ফেলে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে লক করি। তারপর আস্তে করে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসি। রিসেপশনের জায়গাটায় এইসময়টা একটু ভিড় থাকে, ক্লায়েন্ট মিটিঙের জন্য। আমি পাশ কাটিয়ে টুক করে লিফটে উঠে পড়লাম। যাক, অর্ধেক কাজ শেষ, বাকি অর্ধ সেতুর ওপারে!